খুশকি দূর করার উপায়

খুশকি দূর করার উপায় – আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অন্যতম সমস্যা হলো খুশকি। পৃথিবীর সব জায়গার লোকই খুশকিতে আক্রান্ত হয়।প্রাপ্তবয়স্ক লোকদের প্রায় অর্ধেক এই রোগের শিকার। পুরুষদের তুলনায় মেয়েদের আক্রান্তের হার বেশি। খুশকি হচ্ছে একটি চর্মরোগ। খুশকি হওয়ার প্রধান কারণ হলো ফাঙ্গাল ইনফেকশন। সাধারণত বর্ষাকালে ও শীতকালে খুশকি বেশি দেখা যায়। আবহাওয়ার পরিবর্তনের কারণে,পরিবেশ দূষণের কারণে এবং অস্বাস্থ্যকর জীবন-যাপনের কারণে প্রায় সারা বছর খুশকির সমস্যা লক্ষ্য করা যায়।
খুশকির লক্ষণঃ
খুশকি হলে তা বিভিন্ন রকম লক্ষণের মাধ্যমে প্রকাশ পায়। খুশকির লক্ষণের মধ্যে রয়েছে –
১। মাথার ত্বক লাল হয়ে যাওয়া।
২। ত্বক শুষ্ক হয়ে যাওয়া।
৩। ত্বক চিটচিটে হয়ে যাওয়া।
৪। মাথার শুষ্ক ত্বক ঝরে পড়া।
৫। অস্বস্তিকর অবস্থা।
খুশকি হওয়ার কারণঃ
খুশকির স্পষ্ট কোনো কারণ জানা যায়নি। তবে ধারণা করা হয় জিনগত ও পরিবেশগত কারণে খুশকি হতে পারে। এছাড়াও অনেক কারণে খুশকি হতে পারে। খুশকির সবচেয়ে সাধারণ কারণ বলা যেতে পারে সেবোরেইক ডারমাটাইটিস। মেলাসেজিয়া নামক একটি ছত্রাক আছে। এই ছত্রাক সব প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের মাথার খুলিতে থাকে। এই মেলাসেজিয়া ছত্রাক নতুন ত্বক কোষ জন্মাতে সহায়তা করে। কোন কারণে মাথায় ময়লা জমলে এই মেলাসেজিয়া ছত্রাক বিপদের কারণ হতে পারে। এক্ষেত্রে ত্বক কোষ মরে যেতে পারে এবং মাথায় খুশকি হতে পারে। এছাড়াও নিম্নলিখিত কারণগুলো খুশকির জন্য দায়ী।
১। নিয়মিত চুল পরিস্কার না করা।
২। মাথার ত্বক অত্যধিক শুষ্ক হয়ে গেলে।
৩। মাথায় নিয়মিত তেল ব্যবহার না করা।
৪। মাথার ত্বকে ঘাম জমার কারণে ফাঙ্গাল ইনফেকশন হতে পারে।
৫। খুশকিতে আক্রান্ত ব্যক্তির চিরুনি অন্যজন ব্যবহার করলে খুশকি হতে পারে।
৬। সঠিক খাদ্যাভ্যাসের অভাবে খুশকি হতে পারে।
৭। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া।
৮। অতিরিক্ত মানসিক চাপ।
৯। ব্যবহারের পানিতে ক্লোরিনের পরিমাণ বেশি থাকলে মাথার ত্বক দ্রুত শুষ্ক হয়ে খুশকি হতে পারে।
১০। শ্বেত প্রদর জাতীয় অসুখে আক্রান্ত হলে খুশকি হতে পারে।
১০। মাথার ত্বকে ম্যালেসেজিয়া নামক ফাঙ্গাসের পরিমাণ বেড়ে গেলে।
১১। ফাঙ্গাল ইনফেকশনের কারণে।
১২। গরম জল দিয়ে গোসল করলে খুশকি হতে পারে।
১৩। শ্যাম্পু ব্যবহার করার পর ঠিক ভাবে শ্যাম্পু না ধুলে খুশকি হতে পারে।
খুশকি হলে কি হয়?
খুশকি হলে কিংবা খুশকি দ্বারা আক্রান্ত হলে নানা রকম সমস্যা দেখা দেয়। যে সব সমস্যা দেখা দেয় সেগুলো হচ্ছে
১। খুশকি হলে চুলের গোড়ায় চুলকানি হয়।
২। চুল পড়ার পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে।
৩। মাথা চুলকায়।
৪ । চুলে সাদা সাদা গুঁড়া দেখতে পাওয়া যায়।
৫। চুল ময়লা ও তেলতেলে হয়ে যায়।
এছাড়া খুশকি নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে তা মাথা থেকে শরীরে ছড়িয়ে পড়তে পারে। তাই যত দ্রুত সম্ভব খুশকি নিয়ন্ত্রণের পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
খুশকির কি মৌসুম আছে ?
অনেকেই প্রশ্ন করতে পারেন, খুশকির কি কোন মৌসুম আছে? না ,খুশকির কোন নির্দিষ্ট মৌসুম নেই। সব মৌসুমেই মানুষ খুশকি দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে। তবে চরম আবহাওয়ায় খুশকির প্রকোপ বেড়ে যায়। খুব শীত কিংবা খুব গরমের সময় খুশকির প্রবনতা বাড়তে পারে। বর্ষাকালে বায়ুর আর্দ্রতা অনেক বেশি থাকে। এ সময় মাথার তৈলাক্ততা বেড়ে যায় ও খুশকি বাড়ে। সুতরাং আপনি কোন মৌসুমেই নিরাপদ নন।
খুশকি দূর করার উপায়
খুশকি দূর করার উপায়গুলো নিচে বর্ণনা করা হলো –
টকদই ও লেবু
নারিকেল তেল, টকদই ও লেবুর মিশ্রণ খুশকি তাড়াতে সহায়তা করে। মিশ্রণটি সপ্তাহে কমপক্ষে একবার চুলের গোড়ায় ব্যবহার করুন। ১০-১৫ মিনিট রাখার পর চুল ধুয়ে ফেলুন।
খুশকি দূর করতে ডিমের কুসুম
ডিমের কুসুম ভালো করে ফেটিয়ে মাথায় ব্যবহার করুন। ডিমের কুসুম দ্রুত মাথার খুশকি দূর করতে সাহায্য করে। দুই দিন পরপর এটি ব্যবহার করুন। এই উপায় অনুসরণ করলে দ্রুত খুশকি দূর হবে।
বেকিং সোডা দিয়ে খুশকি দূর করার উপায়
বেকিং সোডা খুশকি দূর করতে সাহায্য করে।নিয়মিত সঠিক নিয়মে বেকিং সোডা ব্যবহার করলে খুশকির সমস্যা সমাধান হবে। বেকিং সোডার কোনো পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া নেই।
মাউথওয়াশ দিয়ে খুশকি দূর উপায়
মাউথওয়াশ ও পানি ১ঃ৯ অনুপাতে মিশিয়ে নিন। মাথা শ্যাম্পু করার পরে এই মিশ্রণ চুলের গোড়ায় ঢেলে দিন। এরপর আর মাথায় পানি ঢালা যাবে না।
খুশকি দূর করার তেল
খুশকি দূর করতে যে তেল ব্যবহার করার পরামর্শ দিব সেটি হচ্ছে আমাদের সকলের পরিচিত নারিকেল তেল। নারিকেল তেল চুলের গভীরে প্রবেশ করে চুলের পুষ্টি যোগায়। এছাড়া নারিকেল তেলের ছত্রাক ধ্বংস করার ক্ষমতা রয়েছে। নারিকেল তেল স্ক্যাল্পকে যে কোন রোগ সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে। তাই নিয়মিত নারিকেল তেল ব্যবহার করার মাধ্যমে চুলের খুশকি দূর করা সম্ভব।
অ্যালোভেরা দিয়ে খুশকি দূর করার উপায়
চুলের খুশকি দূর করতে অ্যালোভেরা ও লেবুর ব্যবহার খুবই কার্যকরী। ২ চামচ অ্যালোভেরা এবং ২ চামচ লেবুর রস মিশিয়ে মাথার ত্বকে ম্যাসেজ করতে হবে। ম্যাসেজ করে ১০-১৫ মিনিট রেখে দিন। এরপর শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। তাহলেই খুশকি দূর হবে।
লেবু দিয়ে খুশকি দূর করার উপায়
খুশকি দূর করতে লেবু ও আমলকী ব্যবহার করলে ভালো ফল পাওয়া যায়। ২ চা চামচ আমলকির রসের সঙ্গে ২ চা চামচ লেবুর রস মিশিয়ে চুলের গোড়ায় লাগিয়ে রাখতে হবে। আধাঘণ্টা পর শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলতে হবে।
খুশকি দূর করতে পেঁয়াজ
পেঁয়াজের রস পানিতে মিশিয়ে মাথায় ম্যাসেজ করতে হবে এবং কিছুক্ষণ পর ধুয়ে ফেলতে হবে। এই পদ্ধতিতে পেঁয়াজের রস সপ্তাহে দুদিন ব্যবহার করলে খুশকি দূর হবে।
খুশকি দূর করতে নিমপাতা
নিমপাতা খুশকি দূর করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পানি ফুটিয়ে তার মধ্যে নিমপাতা সারারাত ভিজিয়ে রাখুন। এরপর এই পানি দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। পাতাগুলো পেস্ট করে এর সাথে মধু মিশিয়ে চুলে আধাঘণ্টা লাগিয়ে রাখুন। এরপর শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে একদিন এই পদ্ধতিতে নিমপাতা ব্যবহার করুন।
খুশকি দূর করার শ্যাম্পু
ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ছত্রাকনাশক শ্যাম্পু কিটোকোনাজল (Ketoconazole 2%) ব্যবহার করলে এবং ওষুধ সেবন করলে খুশকি দূর হবে ।
আশা করি পোস্টটি পড়ে আপনি খুশকি হওয়ার কারণ এবং খুশকি দূর করার উপায় জানতে পেরেছেন । পোস্টটি সম্পর্কে আপনার মূল্যবান মন্তব্য কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না ।
আরও পড়তে ক্লিক করুন-