Health

কিডনি রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার

কিডনি রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার – কিডনি হচ্ছে মানব দেহের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ। কিডনী কে বাংলায় বৃক্ক বলা হয়। কিডনি রোগ হচ্ছে নীরব ঘাতক।কিডনি রোগে আক্রান্ত হলে মানুষের দুশ্চিন্তার অন্ত থাকে না। তখন জীবন যাপন, খাদ্য অভ্যাস এবং চলাফেরায় নানা ধরনের পরিবর্তন আনতে হয়।  কোন কারনে কিডনির কার্যকারিতা যদি কমে যায় তাহলে মানুষ নানা ধরনের শারীরিক সমস্যার মুখে পড়েন। কারো কিডনি যদি একেবারে অকার্যকর হয়ে যায় তাহলে তার মৃত্যু অনিবার্য। আজকের পোষ্টে কিডনি রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার, কিডনি কি, শিশুদের কিডনি রোগের লক্ষণ ,বৃক্কের রং কেমন ,কিডনি খারাপ হওয়ার কারণ কি ,কিডনির পয়েন্ট কত হলে ভাল , কিডনি কোথায় থাকে ইত্যাদি বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করব। 

Contents hide

কিডনি কি

কিডনে ইংরেজি শব্দ। এর বাংলা হচ্ছে বৃক্ক। কিডনি প্রাণীদেহের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। মেরুদন্ডী প্রাণীদেহের রেচনতন্ত্রের প্রধান অংশ হচ্ছে কিডনি। কিডনির প্রধান কাজ হচ্ছে রক্তকে ছেকে বিভিন্ন বর্জ্য পদার্থ পৃথক করা এবং মূত্র উৎপাদন করা 

কিডনি কোথায় থাকে 

মানবদেহের অভ্যন্তরভাগে উদর গহবরের পশ্চাদ্ভাগে মেরুদন্ডের দুই পাশে দুইটি কিডনি বা বৃক্ক অবস্থিত।

বৃক্ক দেখতে অনেকটা শিমের বিচির মতো। সাধারণত বৃক্ক দৈর্ঘ্যে  4 থেকে 5 ইঞ্চি হয়ে থাকে।

কিডনি রোগের লক্ষণ

প্রাথমিক অবস্থায় কিডনি রোগের লক্ষণ গুলো  ভালোভাবে প্রকাশ পায় না। অবস্থা জটিল হলে কিডনি রোগের বিভিন্ন লক্ষণগুলো প্রকাশ পেতে থাকে।

তাই কিডনি রোগের লক্ষণগুলো আগে থেকেই জেনে রাখা ভালো। চলুন দেখে নেওয়া যাক কিডনি রোগে আক্রান্ত হলে কি কি শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে।

প্রসাবে পরিবর্তন ঘটা

কিডনি রোগের একটি অন্যতম প্রধান  লক্ষণ হলো প্রস্রাবে পরিবর্তন ঘটা। কিডনি রোগে আক্রান্ত হলে প্রসাব পরিমাণে বেশি বা কম হয়। 

যদি কারো এই সমস্যা হয় তাহলে বুঝতে হবে তার কিডনিতে সমস্যা হয়েছে। বিশেষ করে রাতে এ সমস্যাটি বেড়ে যায়।

অনেক ক্ষেত্রে প্রসাবের চাপ অনুভূত হলেও প্রসাব হয় না।  এছাড়া প্রস্রাবের রঙ গাঢ় হয়ে যায়। 

শরীরে পানি জমে ফুলে যাওয়া

কিডনির শরীর থেকে অতিরিক্ত পানি এবং বর্জ্য পদার্থ বের করে দেয়। কিন্তু কিডনি রোগে আক্রান্ত হলে দেহের অতিরিক্ত পানি বের করে দিতে সমস্যা হয়।তাই হাত-পা মুখের পানি জমে ফুলে যায়।

শরীরের ওজন হ্রাস পাওয়া

কিডনি রোগে আক্রান্ত হলে শরীরের ওজন হ্রাস পায়। যথেষ্ট পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ করা সত্ত্বেও যদি আপনার ওজন ধীরে ধীরে হ্রাস পায়।তাহলে আপনার কিডনিতে সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। 

প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত যাওয়া

প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত যাওয়া কিডনি রোগের একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ। যদি এমনটি ঘটে তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। 

শরীরের ক্লান্তি ভাব আসে

কিডনি রোগে আক্রান্ত হলে সামান্য পরিশ্রমে শরীরের ক্লান্তি ভাব আসতে পারে এবং দুর্বল অনুভব হবে।

ঘুম কম হওয়া

যদি আপনার পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম না হয়।তাহলে আপনার কিডনির কোন সমস্যা হয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখা দরকার। কেননা ঘুম কম হওয়া কিডনি রোগের লক্ষণ ।

চুলকানি হওয়া

কিডনি অকেজো হয়ে গেলে শরীরের বর্জ্য পদার্থের পরিমাণ বাড়তে থাকে। যে কারণে শরীরের বিভিন্ন অংশে চুলকানি হতে পারে এবং র‍্যাস তৈরি হতে পারে।

অসুস্থ বোধ করা

কিডনি রোগে আক্রান্ত লোকেরা প্রায় অসুস্থ বোধ করেন এবং নানা রকম শারীরিক সমস্যায় ভোগেন।

মাঝে মাঝে মাথা ব্যাথা হওয়া

যদি কেউ কিডনি রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে তাহলে মাঝে মাঝে তার মাথাব্যথা হতে পারে। তাই পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে কিডনির কি অবস্থা তা যাচাই করে দেখা উচিত।

প্রস্রাবের সময় ব্যথা অনুভূত হওয়া

প্রস্রাবের সময় ব্যথা অনুভূত হওয়া জ্বালাপোড়া করা ইত্যাদি কিডনি রোগের লক্ষণ। তাই আপনাকে অতিসত্বর ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া উচিত।

মনোযোগ দিতে অসুবিধা হয়

কিডনি রোগে আক্রান্ত হলে রক্তের লোহিত রক্তকণিকা কমে যায়। লোহিত রক্তকণিকা কমে যাওয়ার কারণে মস্তিষ্কে অক্সিজেনের সরবরাহ কমে যায় ।ফলে কোনো কাজে মনোযোগ দিতে সমস্যা হয়।

বমি বমি ভাব হওয়া

যদি কিডনি বিকল হয়ে যায় তাহলে রক্তে বর্জ্য পদার্থের পরিমাণ বেড়ে যায়। বমি ভাব হতে পারে বা বমি হতে পারে।

পেছনে ব্যথা অনুভূত হওয়া

পিঠের পেছনে ব্যথা অনুভূত হওয়া কিডনি রোগের একটি অন্যতম প্রধান লক্ষণ। কিডনি রোগে আক্রান্ত হলে বিচের পাশে নিচের অংশে ব্যথা হতে পারে। এছাড়া কিছু কিছু ক্ষেত্রে শরীর ব্যথা হতে পারে।

ছোট ছোট শ্বাস নেওয়া

কিডনি রোগে আক্রান্ত হলে ফুসফুসের  তরল পদার্থ জমা হতে পারে। এছাড়া শরীরে রক্তশূন্যতা দেখা দিতে পারে। কিডনি রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা হয় এবং অনেকে ছোট ছোট করে শ্বাস নেয়।

কিডনি রোগের কারণ

বিভিন্ন কারণে কিডনি রোগ হতে পারে। ইউরিন ইনফেকশন উচ্চ রক্তচাপ কিডনিতে পাথর ডায়াবেটিস নিয়মিত ব্যায়াম না করা ধূমপান করা ইত্যাদি কারণে কিডনি রোগ হতে পারে।এছাড়া পারিবারিক কারণে কারো কাছ থেকে এই রোগ হতে পারে। 

কিডনি রোগ কি ভাল হয়

হঠাৎ করে কিডনির সমস্যা হলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তা পুরোপুরি নিরাময় করা সম্ভব হয়

তবে দীর্ঘমেয়াদি কিডনি রোগে আক্রান্ত হলে তা পুরোপুরি নিরাময় করা সম্ভব নয়।

দীর্ঘমেয়াদী কিডনি রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা খুবই কম। মাত্র 5% থেকে 10% রোগী দীর্ঘমেয়াদী কিডনি রোগে ভোগেন।

আরও পড়ুন – 

কিডনি রোগ প্রতিকারের উপায়

আমরা ইতিমধ্যে কিডনি রোগের লক্ষণ জেনেছি। এখন এ রোগের প্রতিকার সম্পর্কে জানবো। কিডনি মানুষের দেহের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ। কিডনি রোগ ধীরে ধীরে মানুষের দেহের ক্ষতি করে। তাই কিডনিজনিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার আগেই কিডনি রোগ প্রতিরোধের পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। কিডনি রোগ প্রতিরোধের উপায়গুলো নিম্নরূপ-

১। নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম বা ব্যায়াম করতে হবে।

২। ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপ সবসময় নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। যারা ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত তাদের কিডনি রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি খুব বেশি। তাই যারা ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপের আক্রান্ত তাদের উচিত ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত ওষুধ সেবন করা এবং নিয়ন্ত্রিত জীবন যাপন করা।

৩। যারা ধূমপান করেন তাদের ধূমপানের অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে।

৪। রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা  যেন বৃদ্ধি না পায় সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে।

৫। যাদের শরীরের ওজন বেশি তাদের শরীরের অতিরিক্ত ওজন দ্রুত কমিয়ে ফেলতে হবে।

৬। অতিরিক্ত কাঁচা লবণ খাওয়ার অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে।

৭। প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে ফলমূল ও শাকসবজি খেতে হবে।

৮। অতিরিক্ত পানি পান বা খুব কম পানি পান করা কিডনির জন্য ক্ষতিকর। তাই পরিমিত পরিমাণ পানি পান করতে হবে।

৯। অতিরিক্ত ব্যথার ওষুধ সেবন করা যাবে না।

১০। ইউরিন ইনফেকশন বা কিডনিতে পাথর দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। 

১১। অতিরিক্ত সোডিয়াম যুক্ত খাবার খাওয়া যাবেনা। কারণ সোডিয়াম যুক্ত খাবার খেলে কিডনিতে পানি ধারণ ক্ষমতা কমে যায় এবং বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যা বেড়ে যায়।

১২। যেসব খাবারে প্রচুর পরিমাণে ফসফরাস থাকে সেসব খাবার খাওয়া উচিত নয়। গরু ও খাসির মাংস হাঁস ও মুরগির মাংস বাদাম মটরশুটি ইত্যাদি কম খাওয়ার চেষ্টা করুন।

 ১৩। পটাশিয়ামযুক্ত খাবার কিডনি রোগীদের পরিহার করা উচিত। কারণ যেসব খাবারে অতিরিক্ত পটাশিয়াম থাকে যেসব খাবার খেলে শরীরে রক্তের পরিমাণ বেড়ে যায়।

শিশুদের কিডনি রোগের লক্ষণ

শিশুদের কিডনি রোগের বিভিন্ন  লক্ষণ রয়েছে।  তারমধ্যে সবচেয়ে বেশি দেখা যায় সেটি হচ্ছে নেফ্রোটিক সিনড্রোম। 

সাধারণত 2 থেকে 6 বছরের বাচ্চারা এই রোগে বেশি আক্রান্ত হয়। এক্ষেত্রে যে লক্ষণগুলো দেখা যায় সেগুলো হচ্ছে-

১। শিশুর শরীর ধীরে ধীরে ফুলে যায়।

২। মুখের চারপাশে পানি জমে যায় এবং মুখ ফুলে যায়।

৩। বাচ্চার প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যায়।

৪। জ্বর ও পেটে ব্যথা হতে পারে। 

শিশুর এই লক্ষণগুলো দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।

বৃক্কের রং কেমন

মানবদেহের দুটি বৃক্ক থাকে। প্রতিটি বৃক্ক স্বচ্ছ ও পাতলা পেরিটোনিয়াম ঝিল্লি দিয়ে আবৃত থাকে। বৃক্কের রং খানিকটা বাদামী হয়ে থাকে।

কিডনির পয়েন্ট কত হলে ভাল

পুরুষদের ক্ষেত্রে প্রতি   ডেসি লিটার রক্তে  মান সিরাম ক্রিয়েটিনিন এর মান 0.6- 1.2 মিলিগ্রাম।  যাদের একটি কিডনি নেই তাদের ক্ষেত্রে সিরাম ক্রিয়েটিনিন এর মাত্রা প্রতি ডেসিলিটার রক্তে 1.1 1 মিলিগ্রাম পর্যন্ত স্বাভাবিক। যদি প্রাপ্তবয়স্ক লোকদের রক্তে সিরাম ক্রিয়েটিনিন 5.0 মিলিগ্রাম/ডেসিলিটারের চেয়ে বেশি হল তাহলে বোঝা যায় কিডনি ড্যামেজ হয়েছে। 

কিডনি ভালো আছে কিনা বোঝার উপায়

কিডনি ভালো আছে কিনা তা বুঝার জন্য ইউরিয়া ও সিরাম ক্রিয়েটিনিন পরীক্ষা করা হয়। কিডনি নষ্ট হলে বা রোগে আক্রান্ত হলে ইউরিয়া এবং সিরাম ক্রিয়েটিনিন বেড়ে যায়। সাধারণত জি এফ আর বা সিসিআর টেস্ট করার মাধ্যমে জানা যায় কিডনি কতটা আক্রান্ত হয়েছে কিংবা ভালো আছে। জিএফ আর যদি 90 এর উপরে থাকে তাহলে আপনি নিশ্চিন্তে থাকতে পারেন।

admin

I am Md. Rezaul Karim. I am a blogger and an online entrepreneur. Today I will tell you all the important details about me.I established the quicksearch24.com web site on my personal initiative. In this web site I want to share my knowledge with you about latest technology, health, education, news, travel and online earning.We always try to serve correct and accurate information. Besides, we always try to serve relevant, informative and up-to-date content. We do not publish any obscene or obscene content. We only publish things that are very essential for daily life. So our published content is applicable to people of all ages.The present age is the age of information and technology. So we try to publish new information about technology first. We want people to know that they can make money online by doing simple things like sharing photos on social media or watching videos on YouTube.If you have any questions about any information published on our website or want to know about any other matter, please let us know by commenting. We will try to answer your question correctly as soon as possible.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *