সিজারের দাগ দূর করার ঘরোয়া উপায়
সিজারের দাগ দূর করার ঘরোয়া উপায়-বর্তমানে সিজারের মাধ্যমে সন্তান প্রসবের প্রবণতা বাড়ছে। কিন্তু সিজারের পর মায়ের পেটে কাটা অংশে কাটা দাগের যে চিহ্ন হয় তা সারা জীবন থেকে যায়। সিজারের দাগ দূর করা যায় কি? হ্যাঁ লেজারের মাধ্যমে এখন সিজারের দাগ দূর করা যায়। লেজার করা ব্যয় বহুল হওয়ায় সবার পক্ষে লেজার করা সম্ভব হয় না। ডেলিভারির পর থেকে কিছু ভেষজ উপাদান ব্যবহার করে সিজারের দাগ দূর করা যায়। আজকে সিজারের দাগ দূর করার কিছু ঘরোয়া উপায় নিয়ে আলোচনা করব।
কখন থেকে সিজারের দাগ দূর করার চেষ্টা করবেন
সিজারের দাগ দূর করার জন্য বিশেষজ্ঞরা নানা চিকিৎসার কথা বলে থাকেন। এসব চিকিৎসার মধ্যে একমাত্র মেসেজিং বাড়িতে করা যায়।
তবে এই ম্যাসাজ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী করতে হবে। মেসেজ কখন এবং কিভাবে করবেন তা জেনে নেয়া খুবই জরুরী।
সিজারের ক্ষত শুকানোর পরে
ক্ষত শুকানোর আগে সিজারের দাগ দূর করার কথা মাথায় আনা উচিত নয়। সিজারের কত মাস হলে যে কোন চিকিৎসায় ক্ষতিকারক হতে পারে মায়ের জন্য। যদি চিকিৎসক বলেন যে ক্ষত শুকিয়ে গেছে তাহলেই সিজারের দাগ দূর করার উপায় নিয়ে ভাবা যেতে পারে।
সিজারের দাগ দূর করার জন্য যেভাবে মেসেজ করবেন
ন্যাশনাল সবসময় একদিকে করা উচিত। মেসাস ক্লকওয়াইজ অথবা এন্টি ক্লকওয়াইজ করতে হবে। অর্থাৎ আপনি যদি ঘড়ির কাটার দিকে মেসেজ করেন তাহলে সব সময় ঘড়ির কাটার দিকে করবেন আর যদি ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিকে মাসাজ করেন তাহলে ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিকে করবেন। একসঙ্গে দুই দিকে মাসাজ করা উচিত নয়। সব সময় শুয়ে থাকা অবস্থায় মাসাজ করুন। কেননা বসে থাকা অবস্থায় মাসাজ করলে সিজারের পুরো অংশে আঙ্গুলের চাপ সমানভাবে করে না। এমনভাবে মাসাজ করতে হবে যেন সিজার হওয়া অংশের সর্বত্র মাসাজ এর প্রভাব সমানভাবে পৌঁছায়।
ব্যথা হলে মাসাজ বন্ধ করুন
সিজারের ঘা শুকাতে কিছুদিন সময় লাগে। অনেক সময় মনে হতে পারে সিজার হওয়া অংশের বাইরের ঘা শুকিয়ে গেছে কিন্তু ভেতরের খান অসুখ হতে পারে। ভিতরে ঘা শুকাতে বেশ সময় লাগে। তাই মাসাজ এর সময় যদি কাটা অংশে ব্যথা অনুভূত হয় । তাহলে বুঝতে হবে ভিতর ঘা শুকায়নি। যদি ব্যথা অনুভূত হয় তাহলে মাসাজ বন্ধ রাখতে হবে। কিছুদিন পর আবার মাসাজ করতে হবে যদি ব্যথা কমে থাকে।
জেনে রাখা ভালোঃ সিজারের দাগ দূর করার অনেক উপায় আবিষ্কৃত হয়েছে। কিন্তু কিন্তু এটা সম্পূর্ণভাবে দূর করা সম্ভব নয়। চিরকালের জন্য সিজারের দাগ অল্প হলেও থেকে যাবে।
আরও পড়ুন –
- খুশকি দূর করার উপায়
- চোখ ওঠা রোগের লক্ষণ, প্রতিকার ও করণীয়
- ওজন বাড়ানোর সহজ উপায় গুলো জেনে নিন
- ওজন কমানোর উপায় জেনে নিন
- উচ্চতা অনুযায়ী ওজন কত হওয়া উচিত
- জন্ডিসের লক্ষণ কি জেনে নিন
- টেস্টোস্টেরন হরমোন বৃদ্ধির ব্যায়াম
- ব্যায়াম না করে ওজন কমানোর উপায় জেনে নিন
- প্রাকৃতিক উপায়ে ডায়াবেটিস চিকিৎসা করতে ফাংশনাল ফুড কার্যকরী
- ব্যায়াম করার সঠিক সময় কখন? জেনে নিন
- টেস্টোস্টেরন হরমোন প্রাকৃতিকভাবে বৃদ্ধি করার উপায়
- কিডনি রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার
সিজারের দাগ দূর করার ঘরোয়া উপায়
সিজারের পর কয়েক মাস মায়ের যত্ন নিতে হয়। সিজারের দাগ দূর করার জন্য যে সব মাসাজ উপকরণ বাজারে পাওয়া যায় তার সবগুলোই মায়ের জন্য উপযোগী নাও হতে পারে। তাই বিশেষজ্ঞরা যে সব উপকরণ মাসাজের জন্য নির্দিষ্ট করে বলেছেন সেগুলো ব্যবহার করা উচিত ।
অ্যালোভেরা জেল ব্যবহার করে সিজারের দাগ দূর করার উপায়
সদ্য সন্তান প্রসবের পর মায়ের ত্বকের জন্য অ্যালোভেরা জেল নিরাপদ। এই জেল যে কোন দাগ দূর করতে সাহায্য করে।
তাই সিজারের দাগ দূর করতে মায়েদের অ্যালোভেরা জেল ব্যবহার করা উচিত। অ্যালোভেরা জেল সিজারের দাগের স্থানে ম্যাসেজ করতে হবে।
অ্যালোভেরা জেল যদি আপনি নিয়মিত ব্যবহার করেন তাহলে দেখবেন সিজারের দাগ ধীরে ধীরে মিশে যাবে।
লেবুর রস দিয়ে সিজারের দাগ দূর করার উপায়
লেবুর রস প্রাকৃতিক ব্লিচ হিসেবে কাজ করে। ত্বকের কাটা দাগসহ যে কোন কালো দাগ দূর করতে সাহায্য করে লেবুর রস।
তাই সিজারের দাগ দূর করতে আপনি এই প্রাকৃতিক গুণ সম্পন্ন লেবুর রস ব্যবহার করতে পারেন। আশা করি ভালো ফল পাবেন।
ভিটামিন ই অয়েল দিয়ে সিজারের দাগ দূর করার উপায়
ভিটামিন ই অয়েল ত্বক কোমল ও সতেজ রাখতে সাহায্য করে। আমাদের ত্বকের নিচে কোলাজেন প্রোটিন থাকে।
এই কোলাজেন প্রোটিনের বিভাজন ঘটাতে ভিটামিন ই অয়েল সাহায্য করে। ফলে ত্বকের নিচে নতুন স্তর তৈরি হয়।
ভিটামিন ই অয়েল সিজারের দাগে নিয়মিত ম্যাসেজ করলে সিজারের দাগ ধীরে ধীরে মিশে যায়। আপনি এই তেল ব্যবহার করতে পারেন।
সিজারের দাগ দূর করতে “গ্রিন টি “
চা দিয়ে সিজারের দাগ দূর করা যায়। চায়ের মধ্যে প্রাকৃতিক উপাদান অ্যান্টি অক্সিডেন্ট আছে।
এই অ্যান্টি অক্সিডেন্ট যে কোন কাটা দাগ দূর করতে সাহায্য করে। গরম পানিতে গ্রিন টি ব্যাগ ডুবিয়ে রাখতে হবে।
তারপর সেটা ঠাণ্ডা করে সিজারের দাগের ওপর রাখতে হবে। দৈনিক ৩-৪ বার ১৫ মিনিট ধরে এই কাজটি করতে হবে।
এই পদ্ধতি অবলম্বন করলে সিজারের দাগ ধীরে ধীরে হালকা হতে থাকবে এবং এক সময় দাগ মিলিয়ে যাবে।
মধু দিয়ে সিজারের দাগ দূর করার উপায়
বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দূর করতে মধু ব্যবহার করা হয়। মধুর রয়েছে অ্যান্টিসেপ্টিক ক্ষমতা। তাই এটি ব্যবহার করলে সংক্রমণের ঝুঁকি নেই।
এছাড়া মধু দাগ দূর করতে সাহায্য করে। তাই নিয়মিত মধু ব্যবহার করলে সিজারের গাড় দাগ ধীরে ধীরে হালকা হয়ে যায়।
সিজারের দাগ দূর করতে আলুর রস
আলুর রস সিজারের দাগ দূর করতে সাহায্য করে। কারণ আলুতে রয়েছে প্রাকৃতিক উপাদান ব্লিচ।
আলু টুকরো করে কেটে কাটা অংশে ম্যাসেজ করতে হবে। তারপর ১০-১৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেলতে হবে।
কোকোয়া বাটার ব্যবহার সিজারের দাগ দূর করার উপায় করে
কোকোয়া বাটারে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান। ইহা ত্বককে আর্দ্র ও কোমল রাখে। এছাড়া সিজারের দাগ দূর করতে সাহায্য করে।
সিলিকন ব্যবহার করার মাধ্যমে সিজারের দাগ দূর করার উপায়
সিলিকন ব্যবহার করে সিজারের দাগ দূর করা সম্ভব। বিজ্ঞানীরা ইতিমধ্যে সিলিকন ব্যবহারের সম্মতি দিয়েছেন। সিলিকন ত্বককে আদ্র রাখে এবং ক্ষত শুকাতে সাহায্য করে। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সিলিকন ব্যবহার করলে সিজারের গাঢ় দাগ হালকা হয়ে যায়।
সিজারের দাগ দূর করার আধুনিক উপায়
সিজারের দাগ দূর করার জন্য বিজ্ঞানের আবিষ্কৃত বেশ কিছু উপায় আছে। এগুলো ঘরোয়া উপায়ে নয়। এগুলোর প্রত্যেকটি অপারেশন থিয়েটারে করতে হয়। নিচে সেগুলো বর্ণনা করা হলো-
রেডিও ফ্রিকোয়েন্সির মাধ্যমে
বর্তমানে সিজারের দাগ দূর করার ক্ষেত্রে রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি একটি বহুল প্রচলিত পদ্ধতি। ত্বকের নিচে থাকা ডার্মাল কোলাজেনকে উদ্দীপ্ত করার জন্য রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহার করা হয়। ফলে কোলাজেন বিভাজন দ্রুত ঘটে এবং ত্বকের নিচে নতুন চামড়া তৈরি হতে থাকে। নতুন চামড়া তৈরি হওয়ার কারণে সিজারের দাগ দ্রুত মিলিয়ে যায়।
স্টেরয়েড ইঞ্জেকশন ব্যবহার করে
স্টেরয়েড ইনজেকশন ব্যবহার করলে সিজারের কাটা স্থানের ব্যথা দূর হয়। এছাড়া এই ইনজেকশন সিজারের কাটা দাগ আকারে ছোট করতে সাহায্য করে। সিজারের ক্ষত শুকানোর আগে ও ইনজেকশন ব্যবহার করা যায়।
স্কার রিভিশন সার্জারি
স্কয়ার রিভিশন সার্জারি হচ্ছে এক ধরনের অপারেশন। এই অপারেশনের মাধ্যমে সিজার হওয়া অংশের উঁচু-নিচু চামড়া সমান করে দেওয়া হয়। নতুন সৃষ্ট ক্ষত কে এমন ভাবে বুঝিয়ে দেওয়া হয় যেন তা থেকে আর কোন দাগ তৈরি না হয়।