প্রাকৃতিক উপায়ে ডায়াবেটিস চিকিৎসা করতে ফাংশনাল ফুড কার্যকরী
প্রাকৃতিক উপায়ে ডায়াবেটিস চিকিৎসা করতে ফাংশনাল ফুড কার্যকরী – বর্তমানে সারা বিশ্বে ডায়াবেটিকস রোগীর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। বিশ্বে প্রতি ১০ সেকেন্ডে ১ জন ডায়াবেটিকস রোগী মারা যায়। একবার কেউ এ রোগে হলে আক্রান্ত হলে তাকে সারা জীবন ওষুধ সেবন কিংবা ইনসুলিন গ্রহন করতে হয়। ডায়াবেটিস বা বহুমূত্র রোগ সম্পূর্ণ বা পুরোপুরি নিরাময় করা যায় না। তবে এটি নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। তাই সুস্থ স্বাভাবিক জীবন যাপন করার জন্য ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা খুবই প্রয়োজন। এজন্য ডায়াবেটিস প্রতিরোধ এবং নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরী। আজকের পোষ্টে ডায়াবেটিস কি? প্রাকৃতিক উপায় ডায়াবেটিস চিকিৎসা ইত্যাদি বিষয়ে সংক্ষেপে আলোচনা করব।
ডায়াবেটিস কি?
ডায়াবেটিকস হলো একটি হরমন জনিত রোগ। দেহে কোন কারণে অগ্নাশয় থেকে ইনসুলিন নিঃসরণ কমে গেলে বা বন্ধ হয়ে গেলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে যায় এবং মানুষ ডায়াবেটিকসে আক্রান্ত হয়। এটি একটি গুরুতর ও দীর্ঘমেয়াদী অবস্থা ।ডায়াবেটিস হলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা দীর্ঘ সময় স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকে।
আরও জানতে পড়ুনঃ
- কিডনি রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার
- সিজারের দাগ দূর করার ঘরোয়া উপায়
- খুশকি দূর করার উপায়
- ব্যায়াম করার সঠিক সময় কখন? জেনে নিন
- টেস্টোস্টেরন হরমোন প্রাকৃতিকভাবে বৃদ্ধি করার উপায়
- চোখ ওঠা রোগের লক্ষণ, প্রতিকার ও করণীয়
- ওজন বাড়ানোর সহজ উপায় গুলো জেনে নিন
- ওজন কমানোর উপায় জেনে নিন
- উচ্চতা অনুযায়ী ওজন কত হওয়া উচিত
- জন্ডিসের লক্ষণ কি জেনে নিন
- টেস্টোস্টেরন হরমোন বৃদ্ধির ব্যায়াম
- ব্যায়াম না করে ওজন কমানোর উপায় জেনে নিন
ফাংশনাল ফুড কি
ফাংশনাল ফুড হচ্ছে ঔষধি গুণাগুণ সম্পন্ন বিশেষ ধরনের খাদ্য যেগুলো মানব স্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদানের ঘাটতি পূরণ করতে সাহায্য করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। ফাংশনাল ফুড বর্তমানে আন্তর্জাতিকভাবেই স্বীকৃতিপ্রাপ্ত। আমেরিকা, ইউরো্ জাপান, ব্রিটেন সহ বিভিন্ন দেশে ফাংশনাল ফুডের চাহিদা রয়েছে। বর্তমানে অধিকাংশ খাদ্যদ্রব্য জেনেটিক্যালি মডিফাই এবং হাইব্রিড। বর্তমানে আমাদের গ্রহণ করা অধিকাংশ খাদ্যদ্রব্য এবং পানীয় পানীয়তে পুষ্টি উপাদান থাকে না। কারণ এসব খাদ্য উৎপাদনের বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর কীটনাশক এবং রাসায়নিক সার ব্যবহার করা হয়।ফলে আমাদের শরীরে বিভিন্ন রকম টক্সিন বিষাক্ত পদার্থ প্রবেশ করেন এবং নানা ধরনের রোগ সৃষ্টি করে। ফাংশনাল ফুড এর কাজ হচ্ছে আমাদের শরীর থেকে বিভিন্ন ধরনের বিষাক্ত পদার্থ বের করে দেওয়া। এমন কিছু ফাংশনাল ফুড রয়েছে যা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে এবং নির্মূল করতে সাহায্য করে।যে সমস্ত ডায়াবেটিস রোগী ইনসুলিন ব্যবহার করেন কিংবা ইনসুলিন ব্যবহার করেন না তারা সকলেই ফাংশনাল ফুড গ্রহণ করতে পারেন। ফাংশনাল ফুড সম্পূর্ণ নিরাপদ এবং প্রাকৃতিক। এছাড়া ফাংশনাল কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই।
প্রাকৃতিক উপায়ে ডায়াবেটিস চিকিৎসা করতে ফাংশনাল ফুড কার্যকরী
ডায়াবেটিস একটি দীর্ঘমেয়াদী মরণঘাতী রোগ। কেউ একবার ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত হলে তাকে সারা জীবন কঠিন নিয়ম-শৃঙ্খলা মেনে চলতে হয়। সেই সাথে নিয়মিত ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করতে হয়। কিন্তু অনেকে ওষুধ সেবন করতে অনীহা প্রকাশ করেন। তাই যারা ওষুধ সেবন করতে চাচ্ছেন না,তারা ফাংশনাল ফুড ব্যবহার করে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করতে পারেন।
এমন কিছু ফাংশনাল ফুড সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলো
ডায়াবেটিকস নিয়ন্ত্রণে “করলা”
- করলা হলো ইনসুলিন-পলিপেপটাইড-পি সমৃদ্ধ একটি সবজি। এটি হাইপারগ্লাইসেমিয়ার মাত্রা বৃদ্ধি করার ক্ষমতা রাখে।
- করলাতে ক্যারোটিন এবং মমর্ডিসিন নামক দুটি প্রয়োজনীয় যৌগ থাকে যা রক্তে শর্করার মাত্রা হ্রাস করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
- ডায়াবেটিস কমাতে প্রতিদিন করলা তরকারি হিসাবে ব্যবহার করুন। এ ছাড়া প্রতিদিন সকালে খালি পেটে করলার রস পান করুন।
- করলার রস নিয়মিত সেবনের মাধ্যমে আপনি আপনার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হবেন।
প্রাকৃতিক উপায়ে ডায়াবেটিস চিকিৎসা করতে “নিম”
নিমের তেতো পাতা ডায়াবেটিসের কার্যকর নিরাময় । নিম বিটা কোষগুলিতে ইনসুলিন রিসেপ্টর সংবেদনশীলতা বাড়ায় যা রক্তে শর্করার মাত্রা হ্রাস করে এবং হাইপোগ্লাইকাইমিক ড্রাগের উপর নির্ভরতা হ্রাস করে। নিমের পাতা বা বীজ সেবনে শরীরে ইনসুলিনের প্রয়োজনীয়তা 60% পর্যন্ত হ্রাস পেতে পারে। নিম রক্ত দূষণ রোধ করতে এবং নিরাময় করতে সাহায্য করে।
প্রাকৃতিক উপায়ে ডায়াবেটিস চিকিৎসা করতে “মেথি”
গবেষক ডাঃ আলমগীর মতি বলেছেন, “মেথি ক্রাশ ডায়াবেটিকসের সর্বনাশ”। মেথি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে, গ্লুকোজ সহনশীলতা উন্নত করতে এবং রক্তে শর্করার মাত্রা হ্রাস করতে ব্যবহার করা যেতে পারে কারণ এতে ফাইবার বেশি থাকে। এটি খেলে রক্ত সুগার সঠিকভাবে শুষে নেয়। এটি টাইপ -১ এবং টাইপ -২ ডায়াবেটিস উভয়ই নিয়ন্ত্রণে কার্যকর। এটি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে, গ্লুকোজ সহনশীলতা উন্নত করতে, রক্তে শর্করার মাত্রা হ্রাস এবং গ্লুকোজ হজমের জন্য ইনসুলিনের নিঃসরণে সহায়তা করে। প্রতিদিন রাতে ২ চা চামচ মেথি বীজ এক গ্লাস পানিতে ভিজিয়ে রাখুন এবং সকালে খালি পেটে সেই পানি পান করুন। এ ছাড়া প্রতিদিন মেথি বীজের গুঁড়ো গরম বা ঠান্ডা পানি বা দুধের সাথে পান করুন।
Diabetes নিয়ন্ত্রণে “রসুন”
- রসুনের উপকারিতা অনেক। রসুনকে বলা হয় গরিবের এ্যান্টিবায়োটিক। রসুন স্বাস্থ্য ভালো রাখার ওষুধ হিসেবেও কাজ করে।
- রসুন কোলেস্টরল এর মাত্রা এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে। নিয়মিত রসুন খেলে হার্ট ভালো থাকে এবং ডায়াবেটিকস নিয়ন্ত্রণে থাকে।
প্রাকৃতিক উপায়ে ডায়াবেটিস চিকিৎসা করতে ‘মরিঙ্গা’
মরিঙ্গা ডায়াবেটিস রোগীদের ব্লাড সুগার কমাতে সাহায্য করে। মরিঙ্গা পাতায় রয়েছে এন্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ কোয়েরাসেটিন। এছাড়াও মরিঙ্গা পাতায় ক্লোরোজেনিক নামক আরো একটি এন্টি অক্সিডেন্ট রয়েছে। মরিঙ্গার ক্লোরোজেনিক ইনসুলিনের প্রভাব ফেলে এবং সুগার ভালোভাবে প্রসেস করতে সাহায্য করে। মরিঙ্গা টাইপ 2 ডায়াবেটিস এর ক্ষেত্রে সাপ্লিমেন্ট হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এছাড়া মরিঙ্গা ডায়াবেটিস রোগীদের ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
ডায়াবেটিকস নিয়ন্ত্রণে “তুলসী”
- তুলসী একটি ঔষধি গাছ। তুলসীকে বলা হয় ডায়াবেটিস রোগের ইনসুলিন । তুলসী পাতা বিভিন্ন ভাবে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
- তুলসী পাতার রস খালি পেটে পান করলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমে যায়। তুলসীর রস চায়ের সাথে মিশিয়েও খেতে পারেন।
প্রাকৃতিক উপায়ে ডায়াবেটিস চিকিৎসা করতে ”রোজেলী”
- রোজেলী ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তের গ্লুকোজ কমাতে সাহায্য করে। তাই রোজেলী ন্যাচারালএন্টি অক্সিডেটিভ সাপ্লিমেন্ট হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
- এছাড়া রোজেলি ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে এবং ক্যান্সার প্রতিরোধ ও নিরাময়ে সাহায্য করে।
প্রাকৃতিক উপায়ে ডায়াবেটিস চিকিৎসা করতে জামের বিচি
আমাদের দেশে ডায়াবেটিসের ভেষজ চিকিৎসায় জাম ও জামের বিচি ব্যবহার করা হয়। জামের বিচি রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। রক্তে চর্বির মাত্রা কমায়। এছাড়া গ্লুকোজকে দ্রুত গ্লাইকোজেনে পরিণত হতে সাহায্য করে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আমের পাতা
- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আমের পাতা সহায়তা করে। টাটকা আমের পাতা এক গ্লাস পরিমাণ পানিতে সিদ্ধ করে সারারাত রেখে দিতে হবে।
- পরের দিন সকাল পাতা ছেকে সেই পানি পান করতে হবে। এতে করে ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা থেকে রক্ষা পাওয়া যেতে পারে।
প্রাকৃতিক উপায়ে ডায়াবেটিস চিকিৎসা করতে ”ডুমুরের পাতা”
- ডুমুরের পাতায় রয়েছে পলিফেনল। এই পলিফেনোল ইনসুলিন এর মত কাজ করে। তাই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে।
- গবেষণায় দেখা গেছে দুপুরের পাতার চা খেলে একজন ডায়াবেটিস রোগীর দৈনিক চাহিদা 12 পার্সেন্ট কমে যায়।
- ডুমুরের পাতার চা তৈরির জন্য শুকনো ডুমুরের পাতার গুড়া ২ টেবিল চামচ আধা লিটার পানিতে ছেড়ে দিতে হবে।
- তারপর পানি ১৫ থেকে ২০ মিনিট ফুটাতে হবে। পানি শুকিয়ে অর্ধেক হলে এটাকে চা হিসেবে পান করতে হবে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে গুরমারির পাতা
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে গুরমারির পাতা খুবই কার্যকর।গবেষকদের মতে গুরমারির পাতা ইনসুলিন উৎপাদনকারী বিটা কোষের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে পারে। হারবাল কোম্পানি হামদর্দ তাদের ডায়াবেটিসের ওষুধ তৈরিতে গরুমারি ব্যবহার করে। গুরমারির পাতার নির্যাস ৪০০ মিলিগ্রাম করে প্রতিদিন সকালে ও রাতে খাওয়ার ৩০ মিনিট আগে সেবন করলে Diabetes নিয়ন্ত্রণে থাকে।
প্রাকৃতিক উপায়ে ডায়াবেটিস চিকিৎসা করতে স্যালাসিয়া বা সপ্তরঙ্গী
অধ্যাপক Prof. Steve Hertzler এর মতে প্রতিদিন সকালে নাস্তার সাথে এক গ্রাম স্যালাসিয়া বা সপ্তরঙ্গীর নির্যাস খেলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা প্রায় ৩০% কমে যায় এবং দেহের ইনসুলিনের চাহিদা ২৯ শতাংশ কমে যায়। স্যালাসিয়া বা সপ্তরঙ্গীর মূল উপাদান স্যালিসিনল এবং কোটাল্যানল। এই উপাদানগুলো আলফা গ্লুকোসাইডেজ এনজাইমের কাজে বাধাদান করে। প্রতিদিন সকালে এক গ্রাম স্যালাসিয়া নির্যাস নাস্তার সাথে খেতে হয়।
Diabetes চিকিৎসায় পারমাথেরাপী
- পারমাথেরাপি একটি সমন্বিত চিকিৎসা পদ্ধতি। আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান এবং প্রাচীন লোকজ জ্ঞানের সমন্বয়ে এই পদ্ধতিটির উদ্ভব হয়েছে।
- ডায়াবেটিকস নিরাময়ের একটি স্থায়ী পদ্ধতি হচ্ছে পারমাথেরাপি। এটি রোগ নিরাময়ের খুবই কার্যকর ভূমিকা রাখে।
আজকের পোস্টটি এখানেই শেষ করছি। পোস্টটি পড়ার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ। যদি পোস্টটি পড়ে আপনাদের ভালো লেগে থাকে কমেন্ট করে জানাবেন এবং ফেসবুক ও টুইটারে শেয়ার করুন।