Technology

ন্যানোটেকনোলজি কি? এর ব্যবহার ও সুবিধা-অসুবিধা

ন্যানোটেকনোলজি কি? এর ব্যবহার ও সুবিধা-অসুবিধা – ন্যানোটেকনোলজির জনপ্রিয়তা দিন দিন বেড়েই চলছে। বর্তমানে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ন্যানোটেকনোলজি ব্যবহার করা হচ্ছে। বিভিন্ন যন্ত্রপাতীতে ন্যানোটেকনোলজি ব্যবহার করার জন্য সেগুলো আকার আকৃতিতে ছোট হয়ে গেছে এবং সহজে বহনযোগ্য হয়েছে। ন্যানোটেকনোলজি কি তা জানার আগে ন্যানো শব্দটির সাথে পরিচিত হওয়া দরকার। প্রথমে nano শব্দটি সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিই।

Contents hide

ন্যানো শব্দটির অর্থ কী?

ন্যানো শব্দটি গ্রীক শব্দ Nanos থেকে  বা ল্যাটিন শব্দ Nanus থেকে এসেছে। এর আভিধানিক অর্থ হচ্ছে dwarft । বাংলায় শব্দটির অর্থ হচ্ছে বামন বা যাদুকরী ক্ষমতা সম্পন্ন অতিক্ষুদ্র মানুষ।

দৈর্ঘ্য পরিমাপের একক মিটার। ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র দৈর্ঘ্য পরিমাপে মিটারের উপগুণীতক হিসেবে ন্যানো শব্দটি ব্যবহার করা হয়। আমরা জানি,১ মিটার = ১০০ সেন্টিমিটার। ১ মিটার = ১০০০ মিলিমিটার।

একই ভাবে ১ মিটার = ১০^৯ ন্যানো মিটার। অর্থাৎ ১ মিটারের ১০০ কোটি ভাগের ১ ভাগকে ১ ন্যানো মিটার বলে।

ন্যানোটেকনোলজি কি? What is nanotechnology?

আণবিক ও পারমাণবিক স্কেলে অতিক্ষুদ্র টেকসই ও স্থায়ী ডিভাইস তৈরি করার জন্য ধাতব বস্তুকে সূক্ষ্মভাবে কাজে লাগানোর বিজ্ঞানকে ন্যানো টেকনোলজি বলে।

ন্যানোটেকনোলজির জনক কে?

আমেরিকার পদার্থবিদ রিচার্ড ফাইনম্যানকে ন্যানোটেকনোলজির জনক বলা হয়। তিনি ১৯৫৯ সালের ২৯ ডিসেম্বর ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজিতে এক সেমিনারে বক্তৃতায় সর্বপ্রথম ন্যানোটেকনোলজির ধারণা দিয়েছিলেন।

ন্যানোটেকনোলজির ক্ষেত্র কয়টি?

ন্যানো টেকনোলজির ক্ষেত্র হচ্ছে দুইটি। যথা-

১। টপ-ডাউন

এই পদ্ধতিতে কোনো জিনিসকে কেটে ছোট করে তাকে নির্দিষ্ট আকার দেওয়া হয়। বর্তমান ইলেকট্রনিক্স হলো টপ-ডাউন প্রযুক্তি।

২। বটম-আপ

বটম-আপ পদ্ধতি হলো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আকারের ছোট জিনিস দিয়ে বড় কোন জিনিস তৈরি করা। মূলত ন্যানোটেকনোলজি হচ্ছে বটম-আপ পদ্ধতি।

মনে করুন আপনার একটি বিশেষ ধরনের DNA প্রয়োজন।এখন আপনি কীভাবে এই ডিএনএ তৈরি করবেন?

আপনাকে এখন বটম-আপ পদ্ধতির মাধ্যমে কাজটি করতে হবে। বটম-আপ পদ্ধতিতে DNA এর ছোট ছোট উপাদানগুলো মিশ্রণ করে সেই কাঙ্ক্ষিত DNA টি তৈরি করতে হবে।

আরও পড়তে ক্লিক করুন-

ন্যানোটেকনোলজির ব্যবহার

বর্তমানে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ন্যানোটেকনোলজির ব্যবহার করা হচ্ছে। ন্যানোটেকনোলজির ব্যবহার ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমাদের জীবন যাত্রার মান উন্নয়নে ন্যানোটেকনোলজি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। নিচে ন্যানোটেকনোলজির কিছু গুরুত্বপূর্ণ ব্যবহার উল্লেখ করা হলো –

১। কম্পিউটারের প্রসেসর তৈরি

আমরা প্রায় সকলেই কম্পিউটারের ইন্টেল প্রসেসর নাম শুনেছি। এই ইন্টেল প্রসেসর তৈরিতে ন্যানোটেকনোলজি ব্যবহার করা হয়। অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ন্যানো মিটার স্কেলের সার্কিট দিয়ে এই প্রসেসর তৈরি করা হয়।

২। চিকিৎসা ক্ষেত্রে

ন্যানোটেকনোলজির কল্যাণে চিকিৎসা ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। ঔষধ শিল্পে ন্যানোটেকনোলজি ব্যবহার করে স্মার্ট ড্রাগ তৈরি করা হচ্ছে।

মানব দেহের অসুস্থ কোষগুলোতে সরাসরি ঔষধ সরবরাহ করে অসুস্থ কোষগুলোকে সারিয়ে তুলতে গবেষকরা ন্যানো প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। বিশেষ করে ক্যান্সারের চিকিৎসায় ন্যানো প্রযুক্তি বেশি ব্যবহার করা হচ্ছে।

৩। ক্রীড়া সরঞ্জাম তৈরিতে

খেলাধুলার বিভিন্ন সরঞ্জাম তৈরিতে ন্যানোটেকনোলজি ব্যবহার করা হচ্ছে। বাতাসে গলফ বলের দিক ঠিক রাখতে, র‍্যাকেটের স্থায়িত্ব বৃদ্ধির জন্য এবং টেনিস বলের স্থায়িত্ব বৃদ্ধির জন্য ন্যানো প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়।

৪। রেফ্রিজারেটরে

খাদ্য দ্রব্য দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করতে এবং টাটকা রাখতে রেফ্রিজারেটরে ন্যানো প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে।

৫। রাসায়নিক শিল্পে

রাসায়নিক শিল্পে ন্যানোটেকনোলজি ব্যবহারের ক্ষেত্র দ্রুত সম্প্রসারিত হচ্ছে। পানি বিশুদ্ধকরণ করতে, পরিস্রাবণ পদ্ধতিতে এবং বিভিন্ন জিনিসপত্রের প্রলেপ তৈরির কাজে ন্যানোটেকনোলজি ব্যবহার করা হয়।

৬। জ্বালানি তৈরিতে

বিভিন্ন প্রকার ব্যাটারির জন্য ফুয়েল সেল তৈরি করতে,মিথানলের  মতো  জ্বালানি থেকে হাইড্রোজেন আয়নের জন্য ফুয়েল সেল তৈরি করতে এবং কম খরচে জ্বালানি তৈরি করতে ন্যানো টেকনোলজি ব্যবহার করা হয়।

৭। খাদ্য শিল্পে ন্যানোটেকনোলজির ব্যবহার

খাদ্য সুরক্ষায়, খাদ্যের স্বাদ তৈরিতে, খাদ্য দ্রব্য প্যাকেজিং এর সিলভার তৈরির কাজে ন্যানোটেকনোলজি ব্যবহার করা হয়। আমরা যে চিপস খাই সেই চিপস প্যাকেজিং করতে ন্যানো টেকনোলজি ব্যবহার করা হয়।

৮। সৌর কোষ তৈরিতে :

বর্তমানে আমরা যে সৌর কোষ ব্যবহার করি এর চাইতে আরো অধিক সাশ্রয়ী মূল্যের এবং শক্তিশালী ন্যানো সৌর কোষ তৈরিতে ন্যানোটেকনোলজি ব্যবহার করা হয়।

৯। ভারী শিল্পে :

বিভিন্ন রকমের মোটরগাড়ি, বিমান এবং শোধনাগার তৈরি করতে ন্যানো প্রযুক্তি ব্যবহৃত হচ্ছে।

১০। কম্পিউটারের হার্ডডিস্ক তৈরিতে

কম্পিউটারের হার্ডডিস্ক তৈরিতে বর্তমানে ন্যানো টেকনোলজি ব্যবহার করা হচ্ছে। আর এই হার্ডডিস্ক এর স্টোরেজ দিন দিন বেড়েই চলেছে। ন্যানোটেকনোলজির বদৌলতে কম্পিউটারের হার্ডডিস্কের ধারণ ক্ষমতা কয়েক টেরাবাইট পর্যন্ত বৃদ্ধি করা সম্ভব হয়েছে যা এক সময় মানুষের কল্পনাতীত বিষয় ছিল।

১১। স্পেসক্রাফট ডিজাইন করতে :

কম ওজনের অর্থাৎ হালকা স্পেসক্রাফট ডিজাইন করতে ন্যানোটেকনোলজি ব্যবহার করা হচ্ছে।

১২। ন্যানো রোবট তৈরিতে :

মানব দেহের অভ্যন্তরে অস্ত্রপাচার করার জন্য ন্যানো প্রযুক্তি ব্যবহার করে অতি ক্ষুদ্র রোবট তৈরির গবেষণা চলছে।

১৩। বস্ত্র শিল্পে ন্যানো প্রযুক্তি :

ন্যানো প্রযুক্তি ব্যবহার করে এমন সব পোশাক তৈরি করা সম্ভব হয়েছে যা পানিতে ভিজে না এবং কাপড়ে ময়লা হয় না। এছাড়া কাপড়ের ঘনত্ব ও ওজন ঠিক রাখতে বস্ত্র শিল্পে ন্যানোটেকনোলজি ব্যবহার করা হয়।

১৪। বাতাস পরিশোধনে ন্যানো প্রযুক্তি :

ন্যানো টেকনোলজির সহায়তায় রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে কলকারখানা হতে নির্গত দূষিত কালো ধোঁয়াকে পরিবেশ বান্ধব গ্যাসে রূপান্তর করা হয়।

১৫। নভোযান তৈরিতে ন্যানোটেকনোলজি :

মহাকাশ অভিযানে ব্যবহারের জন্য হালকা নভোযান তৈরিতে ন্যানোটেকনোলজি ব্যবহার করা হয়।

১৬। কৃত্রিম অঙ্গ তৈরিতে :

প্রাণী দেহের কৃত্রিম অঙ্গ প্রত্যঙ্গ তৈরিতে ন্যানোটেকনোলজি সম্ভবনার দ্বার উন্মুক্ত করে দিয়েছে।

ন্যানোটেকনোলজির সুবিধা :

১। খাদ্যজাত দ্রব্য প্যাকেজিং এর সিলভার খুব সহজেই তৈরি করা যায়।

২। ন্যানো প্রযুক্তিতে তৈরি স্মার্ট ড্রাগ ব্যবহার করে অতি দ্রুত রোগ থেকে আরোগ্য লাভ করা যায়।

৩। ন্যানো টেকনোলজিতে তৈরি ফুয়েল সেল, ব্যাটারি, সোলার সেল ইত্যাদির মাধ্যমে সৌরশক্তিকে অধিক পরিমাণে ব্যবহার করা যায়।

৪। ন্যানো প্রযুক্তিতে তৈরি যন্ত্রপাতি, ইলেকট্রনিক সামগ্রী বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী হয়।

৫। ন্যানো ডায়োড , ন্যানো ট্রানজিস্টর, প্লাজমা ডিসপ্লে ইত্যাদি ব্যবহারের ফলে ইলেকট্রনিক সামগ্রী আকৃতিতে ছোট হয়ে আসছে এবং শিল্প জগতে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে।

৬। ন্যানো পার্টিকেল, ন্যানোটিউব ইত্যাদি দ্বারা উৎপাদিত পণ্য মজবুত, টেকসই ,স্থায়ী, আকারে ছোট এবং ওজনে কম হয়।

৭। কোয়ান্টাম কম্পিউটিং বিকশিত হতে যাচ্ছে।

ন্যানো প্রযুক্তির অসুবিধা :

১। ন্যানো পার্টিক্যাল মানব দেহের জন্য ক্ষতিকর।

২। ন্যানো টেকনোলজি ব্যয়বহুল।

৩। ন্যানোটেকনোলজি ব্যবহার করে সার্কিট তৈরির প্রধান সমস্যা হলো স্থির বিদ্যুৎ। ছোট সার্কিটে এই স্থির বিদ্যুৎ প্রায় ১৫০০০ সেন্টিগ্রেড তাপ সৃষ্টি করতে পারে। এই তাপে সার্কিটের উপকরণ গলে সার্কিট নষ্ট হয়ে যেতে পারে।

৪। বিকল্প জ্বালানি উৎপাদন সম্ভব হলে তেল, গ্যাস, পেট্রল, অকটেন এর মূল্য কমে যাবে। ফলে অনেক দেশ আর্থিক সংকটে পড়বে।

৫। ন্যানোটেকনোলজির কল্যাণে আণবিক শক্তি সহজলভ্য হয়ে যেতে পারে যা মানব জাতির জন্য অভিশাপ বয়ে আনবে।

আশা করি আজকের পোস্টটি পড়ে আপনারা ন্যানোটেকনোলজি কি? এর ব্যবহার ও সুবিধা-অসুবিধা সম্পর্কে জানতে পেরেছেন।

admin

I am Md. Rezaul Karim. I am a blogger and an online entrepreneur. Today I will tell you all the important details about me.I established the quicksearch24.com web site on my personal initiative. In this web site I want to share my knowledge with you about latest technology, health, education, news, travel and online earning.We always try to serve correct and accurate information. Besides, we always try to serve relevant, informative and up-to-date content. We do not publish any obscene or obscene content. We only publish things that are very essential for daily life. So our published content is applicable to people of all ages.The present age is the age of information and technology. So we try to publish new information about technology first. We want people to know that they can make money online by doing simple things like sharing photos on social media or watching videos on YouTube.If you have any questions about any information published on our website or want to know about any other matter, please let us know by commenting. We will try to answer your question correctly as soon as possible.