NFC কি? NFC কিভাবে কাজ করে?
NFC কি? NFC কিভাবে কাজ করে?-NFC এর নাম আপনারা অনেকেই হয়তো শুনেছেন। কিন্তু NFC বলতে কি বোঝায় বা NFC কি তা আমরা অনেকেই জানি না। এই ব্যাপারে অনেকের মনে অনেক প্রশ্ন আছে। আপনি কি NFC সম্পর্কে জানতে চান? তাহলে পোস্টটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন। আজকে আমি সহজ ভাষায় সংক্ষেপে NFC কি? NFC কিভাবে কাজ করে?, এনএফসি এর পূর্ণ রূপ কী? এর ব্যবহার সম্পর্কে আলোচনা করব।
NFC এর পূর্ণরূপ কী?
এনএফসি বা NFC এর পূর্নরূপ হলো “Near Field Communication”। এটা দ্বারা অনেক কম দূরত্বের দুটি ডিভাইসের মধ্যে কমিউনিকেট করা যায়। মোটামুটি দুটি ডিভাইসকে লাগালাগি অবস্থায় রাখলেই হবে।
NFC আবিষ্কারের ইতিহাস :
২০০২ সালের ২৫ মার্চ ফিলিপস এবং সনি একটি টেকনোলজি স্পেসিফিকেশন একটি টেকনিক্যাল আউট লাইন প্রতিষ্ঠা করতে সম্মত হয়।
NFC আবিষ্কারের ক্ষেত্রে অস্ট্রিয়ান এবং ফ্রেন্স ইঞ্জিনিয়ার ফ্রাঞ্জ আমটম্যান এবং ফিলিপে মাউগারস অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন।
এই অবদানের জন্য ২০১৫ সালে ফ্রাঞ্জ আমটম্যান এবং ফিলিপে মাউগারসকে ইউরোপীয়ান ইনভেন্টর অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়।
২০০৩ সালের ৮ ডিসেম্বর NFC কে ISO/IEC স্টান্ডার্ড হিসেবে এবং এরপর ECMA স্টান্ডার্ড হিসেবে অনুমোদন দেয়া হয়।
২০০৪ সালে Nokia, philips এবং Sony মিলে NFC ফোরাম প্রতিষ্ঠা করেন।
২০০৪ সালে Nokia 5140 এবং Nokia 3220 মডেলের মোবাইলে প্রথম NFC হার্ডওয়্যার যুক্ত করা হয়।
NFC কি বা এনএফসি কি?
NFC হচ্ছে একটি স্বল্প পরিসরের উচ্চ ফ্রিকোয়েন্সি বেতার যোগাযোগ প্রযুক্তি। এটা এমন একটা অপশন যার সাহায্যে আপনি যেকোনো ধরনের তথ্য এক ডিভাইস থেকে অন্য একটা ডিভাইস খুব তাড়াতাড়ি এবং নিরাপদে স্থানান্তর করতে পারবেন। আর এই কমিউনিকেশনের জন্য একটা ট্রান্সমিটিং ডিভাইস লাগে আর আরেকটা লাগে যেটা সিগন্যাল রিসিভ করে। ডাটা আদান-প্রদানের জন্য দুইটি ডিভাইসকে খুব কাছাকাছি রাখতে হবে।
বুলুটুথ এবং NFC পার্থক্য
আসলে NFC বুলুটুথের মত মনে হলেও বুলুটুথ না। বুলুটুথ দিয়ে তথ্য স্থানান্তর করতে আমাদের বিভিন্ন ধরনের পারমিশন চালু করতে হয় এবং তথ্য স্থানান্তর হতে মোটামুটি অনেক সময় নেয়। কিন্ত NFC দিয়ে খুব সল্প সময়ের মধ্যেই আপনি যে কোন ধরনের তথ্য স্থানান্তর সম্পন্ন করতে পারবেন। এনএফসি এর ব্যবহারে অনেক কম ব্যাটারি ক্ষয় হয় এবং এটি ব্যবহার করা প্রচুর সহজ হয়ে থাকে। সচারাচর যেসব ফোনে ওয়্যারলেস চার্জার থাকে সেইসব ফোনে NFC সাপোর্ট থাকবেই। যে সব ফোনে NFC সাপোর্ট করে সে সব ফোনে ওয়াকিটকির মতো কথা বলা যায়।শুধুমাত্র ব্লুটুথ ডিভাইস কানেক্ট করলেই হয়।
আরও পড়তে ক্লিক করুন-
- কলয়েড কি? কলয়েডের বৈশিষ্ট্য
- ন্যানো টেকনোলজি কি? এর ব্যবহার ও সুবিধা-অসুবিধা
- গুগল ফটোসের স্টোরেজ ক্লিয়ার করার উপায়
- জিমেইল আইডি কিভাবে খুলবো?
- VPN কি? VPN ব্যবহারের সুবিধা ও অসুবিধা কি কি?
- গুগল ম্যাপে কিভাবে লোকেশন এড করব
- গুগল ড্রাইভ কি এবং কিভাবে ব্যবহার করব?
- ISP এর পূর্ণরূপ কী? ISP কীভাবে কাজ করে?
NFC কিভাবে কাজ করে?
NFC কোন নতুন প্রযুক্তি নয়। NFC হচ্ছে RFID অর্থাৎ রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি আইডেন্টিফিকেশন প্রযুক্তির একটি পরিবর্তিত রূপ বা বিবর্তন। আর RFID প্রযুক্তি কয়েক দশক ধরে ব্যবহার করা হচ্ছে। স্বল্প পরিসরে RFID ইন্ডাকটিভ কাপলিংয়ের নীতিতে কাজ করে। RFID এর মতো NFC একই নীতিতে কাজ করে। এটি একটি কুণ্ডলী মাধ্যমে একটি বৈদ্যুতিক প্রবাহ পাস করে একটি চৌম্বক ক্ষেত্র উৎপন্ন করে। এরপর নিজস্ব কয়েল সহ একটি ট্যাগ কাছাকাছি আনা হলে তখন চৌম্বক ক্ষেত্রটি ট্যাগের মধ্যে তারবিহীন একটি বৈদ্যুতিক প্রবাহকে প্ররোচিত করে। তারপর একবার স্পর্শ করলেই ট্যাগে থাকা যেকোন ডেটা পাঠকের কাছে বেতার তরঙ্গের মাধ্যমে প্রেরণ করা হয়। যদিও NFC প্রযুক্তি RFID প্রযুক্তির উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে কিন্তু এনএফসির ট্রান্সমিশন রেঞ্জ অনেক কম। NFC এবং RFID এর মধ্যে মূল পার্থক্য হচ্ছে এদের ট্রান্সমিশন রেঞ্জ। NFC এর ট্রান্সমিশন রেঞ্জ যেখানে মাত্র কয়েক সেন্টিমিটার সেখানে RFID এর ট্রান্সমিশন রেঞ্জ হচ্ছে প্রায় একশত ফুট।
যে সব ডিভাইসে NFC সাপোর্ট করে :
যত দিন যাচ্ছে ততই NFC হার্ডওয়ার যুক্ত ডিভাইস এর সংখ্যা বাড়ছে। বর্তমানে মোবাইলের পাশাপাশি ল্যাপটপেও NFC ব্যবহার করা হচ্ছে। বর্তমানে NFC যে সব ডিভাইসে যুক্ত করা হয়েছে তার মধ্যে আছে অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইস যেমন গ্যালাক্সি নেক্সাস, নেক্সাস এস, নেক্সাস ৪,গ্যালাক্সি এস ৩, গ্যালাক্সি এস ৪, এইচটিসি ওয়ান এক্স ইত্যাদি মোবাইলে। অ্যান্ড্রয়েড ছাড়াও উইন্ডোজ ফোনে বা ডিভাইসে NFC সাপোর্ট করে যেমন এইচটিসি এর উইন্ডোজ ফোন ৮এক্স সিরিজ, নোকিয়ার লুমিয়া সিরিজ এবং কিছু ব্ল্যাকবেরি ফোনও NFC সাপোর্ট করে। কিন্তু অ্যাপেলের কোন ডিভাইসে এখনও NFC সাপোর্ট করে না।
NFC ডিভাইস দুই ধরনের হয়ে থাকে যথা-
1. Passive ডিভাইসঃ Passive NFC ডিভাইসগুলা হল বিভিন্ন ট্যাগ এবং ছোটছোট ট্রান্সমিটার যেগুলো active ডিভাইসে বিভিন্ন ড্যাটা পাঠাতে পারে কিন্তু তাদের কোন ধরনের ব্যাটারি থাকেনা বা পাওয়ার সাপ্লাইও না অর্থাৎ কোন ধরনের শক্তি ছাড়াই এটা ড্যাটা ট্রান্সমিট করতে পারে। Passive Device অন্য Passive Device এর সাথে কানেক্ট হতে পারেনা, এরা কোন ধরনের ড্যাটা প্রসেসও করতে পারে না,শুধু পাঠাতে পারে।
2. Active ডিভাইসঃ Active ডিভাইস ড্যাটা সেন্ডও করতে পারে, রিসিভও করতে পারে। দুইটা Active Device নিজেদের মধ্যেও কানেক্ট হতে পারে। NFC এখন স্মার্টফোনে ব্যবহ্রত হলেও উন্নত বিশ্বে এগুলা আগে থেকেই পাবলিক ট্রান্সপোর্ট কার্ড রিডার, টাচ পেমেন্ট টার্মিনালে ব্যবহার করা হয় ।
NFC এর কিছু গুরুত্বপূর্ণ ব্যবহারঃ
১। Mobile Payment :
আপনি এনএফসির মাধ্যমে পেমেন্ট করতে পারবেন। বর্তমানে Samsung Pay ,Apple Pay এবং Android Pay অনেক জনপ্রিয়। এই সকল পেমেন্ট সিস্টেম এনএফসির উপরই কাজ করে।
আপনি যদি শপিং করতে যান এবং ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে পেমেন্ট করতে চান তাহলে ক্রেডিট কার্ডের তথ্য মোবাইলে সেভ থাকলেই হবে। ক্রেডিট কার্ড সঙ্গে রাখার প্রয়োজন নেই। যদি আপনি আপনার ফোনে ক্রেডিট কার্ড বা ডেবিট কার্ড ইনফরমেশন সেভ করে রাখেন তবে ফোনে অ্যাপ্লিকেশন অন করে ক্রেডিট কার্ড সয়াইপ করার জন্য যে টার্মিনাল থাকে তার উপর ধরলেই আপনার পেমেন্ট হয়ে যাবে।
২। Data Transfer :
NFC অ্যানাবল ফোনে ড্যাটা ট্রান্সফারের জন্য ব্লুটুথের মতো আপনাকে কোন পেয়ারিং বা কোন কোড প্রবেশের প্রয়োজন পড়বে না।আপনার কাছে দুটি এনএফসি অ্যানাবল ফোন থাকলে খুব সহজে ফোনের ডাটা ট্র্যান্সফার করতে পারবেন। এই অবস্থায় আপনার ফোন দুইটিকে একে অপরের অনেক কাছে নিয়ে আসুন। এবার টাচ করার সাথে সাথেই আপনার দুই ফোনেই ড্যাটা ট্রান্সফারের অপশন চলে আসবে। এবার যে ফোন থেকে আপনি কিছু পাঠাতে চান সেখান থেকে জাস্ট ফাইলটি পাঠিয়ে দিন। ফাইলটি চলে যাবে আরেকটি ফোনে।
৩। NFC Tag :
NFC ট্যাগ অনেক ছোট একটি ডিভাইজ হয়ে থাকে এবং বিভিন্ন আকারের হতে পারে। NFC Tag গুলো হচ্ছে ছোট ছোট স্টিকার এর মতো, যার মধ্যে আপনি আপনার কিছু তথ্য জমা রাখতে পারবেন। এই ট্যাগে অনেক ছোট পরিমানের ডাটা সংরক্ষন করে রাখা যায়। যেমন- আপনার কন্টাক্ট তথ্য অথবা ওয়াইফাই পাসওয়ার্ড ইত্যাদি।
মনে করুন আপনি একটি এনএফসি ট্যাগে আপনার ঘরের ওয়াইফাই পাসওয়ার্ড সেভ করে রেখেছেন এবং দেওয়ালে কোথাও চিপকে লাগিয়ে রেখেছেন।
আপনার কোন বন্ধু আপনার বাসায় বেড়াতে আসল এবং আপনার ওয়াইফাই পাসওয়ার্ড জানতে চাইল। আপনি তাকে ঐ ট্যাগটি দেখিয়ে দিন।
এখন যদি আপনার বন্ধু তার এনএফসি অ্যানাবল ফোন ঐ ট্যাগে টাচ করে তবে সাথে সাথে তার ফোনে পাসওয়ার্ড চলে যাবে।
আপনার ওয়াইফাই নেটওয়ার্কের সাথে কানেক্ট হয়ে যাবে। আপনাকে আর কষ্ট করে বন্ধুকে পাসওয়ার্ড বলতে হবে না।
৪। Divice Pairing :
Device Pairing এর জন্যেও বর্তমানে NFC ভাল একটা মাধ্যম। NFC মাধ্যমে আপনি খুব সহজেই দুইটি ডিভাইসের মধ্যে পেয়ারিং করতে পারবেন।
আপনি যে কোন ধরনের NFC সাপোর্টেড Device তথা বুলুটুথ স্পিকার, বুলুটুথ হেডফোন, টেলিভিশন ইত্যাদি’র সাথে আপনার মোবাইল কানেক্ট করতে চান?
তাহলে আপনার মোবাইল শুধু মাত্র Device এর পাশে নিয়ে ধরলে অটোমেটিক কানেক্ট হয়ে যাবে,কোন রকম পারমিশন এনাবল করা ছাড়াই।
মনে করুন আপনি একটি নতুন বুলুটুথ স্পীকার কিনলেন। NFC ছাড়া ফোনের সাথে বুলুটুথ স্পিকার কানেক্ট করতে চাচ্ছেন। কীভাবে করবেন?
প্রথমে আপনার ঐ ডিভাইজটির ব্লুটুথ অন করতে হবে তারপর আপনার ফোনের ব্লুটুথ সেটিংসে গিয়ে ডিভাইজ অনুসন্ধান করতে হবে।
তারপর ডিভাইজটিতে একটি নির্দিষ্ট পিন প্রবেশ করিয়ে পেয়ার করতে হবে। এটি অনেক লম্বা একটি প্রসেস এবং অনেক সময় লাগে।
কিন্তু NFC এই কাজটি অনেক সহজ করে দিয়েছে। মনে করুন আপনার সামনে একটি ব্লুটুথ স্পীকার রয়েছে এবং তার পাওয়ার অন করা আছে। এখন জাস্ট আপনার ফোনের NFC অন করুন এবং স্পীকারটির সাথে আপনার ফোন টাচ করালেই যতো প্রকারের পেয়ারিং আছে ডিভাইজ দুইটি নিজে থেকেই তা সম্পূর্ণ করে নেবে।
৫। NFC Business Card :
আজকের শেষ ব্যবহারটি হলো এনএফসি বিজনেস কার্ড। NFC বর্তমানে Business Card কে অনেক সহজ করে তুলেছে। বর্তমানে এটি অনেক জনপ্রিয় একটি ব্যবহার।
এটি দেখতে একদম আপনার নরমাল বিজনেস কার্ড বা ভিসিটিং কার্ডের মতোই হয়ে থাকে কিন্তু তা এনএফসি অ্যানাবল হয়ে থাকে।
এর মাধ্যমে আপনি আপনার কার্ডে যা তথ্য লিখবেন তা তো থাকবেই এবং সাথে আপনি এনএফসি চিপে অনেক তথ্য সংরক্ষন করে রাখে পারবেন।
সেখানে আপনার কন্টাক্ট নাম্বার, আপনার বিজনেস ওয়েবসাইট লিঙ্ক, ফেসবুক ফ্যান পেজ লিঙ্ক, টুইটার লিঙ্ক, লিঙ্কডইন লিঙ্ক ইত্যাদি রাখতে পারবেন।
একটি এনএফসি অ্যানাবল্ড মোবাইল যখনই ঐ কার্ডে টাচ করানো হবে তখন সেখানকার সংরক্ষিত সকল তথ্য আপনার মোবাইল ফোনে চলে আসবে।
৬। ট্রানজিট এবং বোর্ডিং পাস :
আপনি আপনার NFC সুবিধাযুক্ত স্মার্টফোনটিকে ট্রানজিট এবং বোর্ডিং পাস হিসেবে ব্যবহার করতে পারবেন যেকোনো এয়ারপোর্টে।
৭। সিকিউরিটি পাস :
গাড়ির দরজার লক খুলতে কিংবা বাড়ির দরজার লক খুলতে NFC ব্যবহার করা যেতে পারে।
এছাড়া বর্তমানে NFC ক্যামরেকর্ডার, সনির ক্যামেরা এবং কার অডিও সহ বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্স যন্ত্র পাতিতে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে।
আশা করি আজকের পোস্টটি পড়ে আপনি NFC কি, NFC কিভাবে কাজ করে,NFC এর ব্যবহার সম্পর্কে জানতে পেরেছেন।