এন্ড্রয়েড ফোনে প্যাটার্ন লক দিয়েছেন? বিপদ এড়াতে করণীয় জেনে নিন
এন্ড্রয়েড ফোনে প্যাটার্ন লক দিয়েছেন? বিপদ এড়াতে করণীয় জেনে নিন – প্যাটার্ন লক অধিকাংশ এন্ড্রয়েড ফোন ব্যবহার করে ভিডিও অথেন্টিকেশন মেথড। গুগল ২০০৮ সালের দিকে এন্ড্রয়েড ফোনে প্যাটার্ন লক ফিচার যুক্ত করে। বর্তমানে এন্ড্রয়েড ফোনে ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা ফেস আইডির মত বায়োমেট্রিক অথেন্টিকেশন মেথড ব্যবহার করা হচ্ছে। এন্ড্রয়েড ফোনে এগুলোর পাশাপাশি সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় প্যাটার্ন লক। কিন্তু বর্তমানে সিকিউরিটি এক্সপার্টরা android ফোনে প্যাটার্ন লক ব্যবহার নিয়ে সাবধানতা অবলম্বনে পরামর্শ দিচ্ছেন। আজকের আর্টিকেলে প্যাটার্ন লক ব্যবহারের কারণে কি কি সমস্যা হতে পারে, এ সকল সমাধানে করণীয় এবং প্যাটার্ন লক এর কিছু কার্যকলি বিকল্প সম্পর্কে জানব।
প্যাটার্ন লক এর দুর্বলতা
প্যাটার্ন লক খুব সহজে মনে রাখা যায়। প্যাটার লগের সহজ ব্যবহার যোগ্যতাই হচ্ছে এর সবচেয়ে বড় সুবিধা। পাসওয়ার্ড ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিভিন্ন অক্ষর, সংখ্যা, চিহ্ন ইত্যাদি তারা তৈরি করা হয় বলে এটি সহজে মনে রাখা যায় না। কিন্তু প্যাটার্ন লক এর ক্ষেত্রে ব্যাপারটি বিপরীত। প্যাটার্ন লক একবার দেখলেই তা মনে রাখা যায়। কিন্তু পাসওয়ার্ড একবার দেখে মন রাখা সহজ নয়।
মানুষ সবসময় সহজে মনে রাখা যায় এমন প্যাটার্ন ব্যবহার করে থাকেন। মানুষ লক স্ক্রিন হিসেবে চেনাজানা সহজ প্যাটার্ন ব্যবহার করে থাকেন। অধিকাংশ মানুষ প্যাটার্ন শুরু করেন যে কোন একটি কর্নার থেকে।আবার অনেকে টপ লেফট কর্নার ডট থেকে প্যাটার্ন শুরু করে থাকে। আবার অনেকে কোন অক্ষরের আকৃতিকে লক প্যাটার্ন হিসেবে বেছে নেন। যেমন অনেকে লক প্যাটার্ন হিসেবে ইংরেজি ক্যাপিটাল এল বা ক্যাপিটাল এম ব্যবহার করে থাকেন। এছাড়াও অনেকে নিজের নামের প্রথম অক্ষর বা প্রিয়জনের নামের প্রথম অক্ষর প্যাটার্ন লক হিসেবে ব্যবহার করে থাকেন। অনেক ক্ষেত্রে বারবার প্যাটার্ন লক ব্যবহার করার কারণে স্কিনে দাগ বসে যায় যা দেখে অন্য কেউ সহজেই লক প্যাটার্ন আন্দাজ করতে পারেন।
লক প্যাটার্ন তৈরিতে অধিকাংশ ব্যবহারকারী চার থেকে পাঁচটি নোড ব্যবহার করে থাকেন। ফলে এটাকাররা খুব সহজে লক স্ক্রিন প্যাটার্ন আন্দাজ করতে সক্ষম হন। এন্ড্রয়েড ফোনে সহজ প্যাটার্ন ব্যবহার করলে নিরাপত্তাগত সমস্যা দেখা দেয়। আবার কঠিন প্যাটার্ন ব্যবহার করলে তা ভুলে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। প্যাটার্ন লক ভুলে গেলে নানা ধরনের ঝামেলা পোহাতে হয়।
প্যাটার্ন লককে যেভাবে শক্তিশালী করবেন
আপনি নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন প্যাটার্ন লক ব্যবহার করলে কি ধরনের সমস্যা হতে পারে। তাই এন্ড্রয়েড ফোনে অথেন্টিকেশন মেথড হিসেবে প্যাটার্ন লক ব্যবহার করার ক্ষেত্রে আপনাকে সচেতন হতে হবে। আপনি যদি অথেন্টিকেশন মেথড হিসেবে প্যাটার্ন লক ব্যবহার করতে চান। তাহলে আপনি নিচের পরামর্শ গুলো মেনে চলুন-
- এমন প্যাটার্ন লক ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন যা অন্য কেউ সহজে আন্দাজ করতে পারে।
- আপনার প্যাটার্নকে একটু জটিল ও কঠিন করুন। যাতে কেউ একবার দেখে প্যাটার্ন বুঝে ফেলতে না পারে। এজন্য আপনি লম্বা প্যাটার্ন ব্যবহার করতে পারেন। আপনার ফোনের নিরাপত্তা বাড়াতে কমপক্ষে 8 থেকে 9 টি নোড ব্যবহার করুন।
- সাধারণত মানুষ কর্নার থেকে লক কাটার শুরু করে আপনি এর ব্যতিক্রম কিছু করুন। এতে অন্য কেউ সহজে আপনার লক পাঠান আন্দাজ করতে পারবে না।
প্যাটার্ন লক এর বিকল্প
আপনি যদি প্যাটার্ন লক ব্যবহার করতে না চান, তাহলে আপনি অন্য নিরাপদ বিকল্প গুলো ব্যবহার করতে পারেন। প্যাটার্ন লক এর বিকল্পসমূহ সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলো।
পাসওয়ার্ড ব্যবহারঃ আপনার স্মার্টফোনের সর্বোচ্চ নিরাপত্তার জন্য পাসওয়ার্ড ব্যবহার করতে পারেন। শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করার জন্য ছোট ও বড় হাতের অক্ষর, সংখ্যা , চিহ্ন ইত্যাদি ব্যবহার করে জটিল পাসওয়ার্ড তৈরি করুন। প্যাটার্ন লগের চেয়ে জটিল পাসওয়ার্ড আন্দাজ করা বা বুঝা অনেক কঠিন।
পিন কোড ব্যবহারঃ ফোনের স্কিনের নিরাপত্তা বাড়াতে পিন ব্যবহার করতে পারেন। পিন কোড ব্যবহার প্যাটার্ন লকের চেয়ে উত্তম। সাধারণত পিন বেশ সাধারণ হয়ে থাকে। সহজ পিন ব্যবহার করলে নিরাপত্তা গত সমস্যায় পড়তে হয়। তাই সহজ পিন যেমন “১২৩৪” বা “০০০০” ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন। এছাড়া আপনার ফোন নাম্বার কিংবা জন্ম তারিখ তিন হিসেবে ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন। কারণ এগুলো খুব সহজে আন্দাজ করা যায়।
বর্তমানে অধিকাংশ স্মার্টফোনে ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর, ফেসিয়াল রিকগনিশন এবং আইরিস স্ক্যানিং এর মত বায়োমেট্রিক অথেনটিকেশন টুল রয়েছে। এই পদ্ধতি গুলোর ব্যবহার আপনার স্মার্টফোনের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। আর এই পদ্ধতি গুলো চিরাচরিত ব্যবহৃত পদ্ধতিগুলোর চেয়ে দ্রুত এবং নিরাপদ।
এছাড়া স্মার্ট লক হচ্ছে একটি অ্যাডভান্সড ফিচার। এই ফিচারটি অন-বডি ডিটেকশন বা ট্রাস্টেড ডিভাইস ব্যবহার করে স্মার্ট ফোন আনলক করা হয়। এটি একটি অ্যাডভান্সড ফিচার। তাই এটি সম্পর্কে সম্পূর্ণ ধারণা না থাকলে ব্যবহার করা উচিত নয়।
স্মার্টফোনের নিরাপত্তার জন্য প্রতিনিয়ত নতুন নতুন ফিচার যুক্ত হচ্ছে। প্রচন্ড ব্যবহারের ক্ষেত্রে সচেতনতা অবলম্বন করতে হবে। এছাড়া প্যাটার্ন লকের বিকল্প গুলো ব্যবহার করে আপনার ব্যক্তিগত ফাইল ও ডিজিটাল জীবন ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
স্মার্টফোন সিকিউরিটি সম্পর্কিত আপডেট প্রতিনিয়ত যোগ হয়েই চলেছে। এমন অবস্থায় প্যাটার্ন লক ব্যবহার করতে চাইলে অনেক সচেতন হতে হবে। সেই সাথে উল্লিখিত বিকল্প পথগুলো ব্যবহার করে সঠিক কৌশল অবলম্বন এর মাধ্যমে আপনার ব্যক্তিগত ফাইল ও ডিজিটাল জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ভুলবেন না